নিউজ ডেস্কঃ খেলতে ভালোবাসতো। এই খেলাই যে কাল হবে স্বপ্নেও ভাবেননি পূর্ব বর্ধমানের কালসীর বাসিন্দা হেমন্ত ব্যানার্জি। তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। খেলতে খেলতে পড়ে যায়। মাথায় আঘাত লাগে। এরপরই সব অন্ধকার। অকালে দৃষ্টি শক্তি হারাতে হয়। এরপরই লড়াই শুরু। যে লড়াই অন্যদের হার না মানতে শেখাচ্ছে। শেখাচ্ছে এগিয়ে চলার মন্ত্র। দৃষ্টি শক্তি হারিয়েও হারিয়ে যাননি হেমন্ত।
ছোট থেকেই মেধাবী। খুব গরীব পরিবার। হেমন্তরা সাত ভাই। নয় মাস বয়সে বাবাকে হারায়। মা মুড়ি ভেজে সংসার সামলায়। চোখ হারিয়ে ফেলার পরেও ভেঙে পড়েনি হেমন্ত। অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তি তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। প্রথমে উত্তরপাড়ায় একটি স্কুলে বেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা শুরু করে। এরপর তার ইচ্ছা হয় সাধারণ ছেলেদের সঙ্গে পড়াশোনা করার। তাই বেইল পদ্ধতি শিখলেও ক্লাস এইটের পর উত্তরপাড়ায় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে পঞ্চম হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল হেমন্ত। এরপর বর্ধমানের মেমারির বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির (শাখা দুই) স্কুলে ভর্তি হয়। প্রথমে দৃষ্টিহীন হয়ে এই স্কুলে ভর্তির জন্য সমস্যা হলেও পরে শিক্ষকদের বুঝিয়ে ভর্তি হয়। এরপর সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করে। মেমারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করে এসএসসি দিয়ে ২০০৭ সালে স্কুলের শিক্ষক পদে নিযুক্ত হয়। প্রথমে গলসির ১ নং ব্লকের লোহা হাইস্কুলের শিক্ষকতা শুরু করে। তখন অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে হেমন্ত। একা লাঠি নিয়ে ৬ টা গাড়ি পাল্টে বাড়ি থেকে ১৮০ কিমি দূরে যাতায়াত করতে হত। কারো সাহায্য ছাড়ায় নিজের কর্মস্থলে ঠিক সময়ে পৌঁছাত সে। সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সেই স্কুলের ছাত্রদের মন জয় করে। নিজেকে প্রমাণ করে। এখন সে নিজের স্কুল মেমারির বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির (শাখা দুই) এর শিক্ষক। সেখানে সে ছাত্রদের খুব প্রিয় হয়ে ওঠে। ছাত্র থেকে শিক্ষক সকলেই তাকে খুব ভালোবাসে। হেমন্ত জানিয়েছে, তার লড়াই এ মা এবং স্ত্রীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। ব্লাইন্ড ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এছাড়া দৌড় প্রতিযোগিতা, লঙ জ্যাম্প, হাই জ্যাম্প –এও অংশ নিয়েছে। এনেছে প্রচুর পুরস্কার। এছাড়া সাড়া ভারত দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। দাবা খেলায় যথেষ্ট পটু। অনেক পুরস্কার পায়। বরাবরই পাহাড়ে ওঠার তার নেশা। মাঝে মাঝেই ছুটে যায় পাহাড়ে। ২১,০০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ে ট্র্যাকিংও করেছে। ২০০৫ সালে অমরনাথ যাত্রা করেছিল।
লড়াকু শিক্ষকের দেখুন ভিডিও-
*** ‘হাইলাইস বেঙ্গল’ এর নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ Like করুন।
আপনি কি কবিতা বা গল্প লেখেন? পাঠান আমাদের। ‘হাইলাইস বেঙ্গল’’ এর বিশেষ বিভাগ ‘আপনার লেখা’ তে প্রকাশিত হবে। আপনার লেখা পৌঁছে যাবে বিশ্বের দরবারে। লেখা পাঠান এই ই-মেলে- highlightsbengal.news@gmail.com
উদ্যোগপতি, জীবন সংগ্রাম, কঠিন লড়াই, সাফল্য, বিশেষ কৃতিত্ব সংক্রান্ত কাহিনী এই বিভাগে প্রকাশ করা হবে। এই ধরনের গুণী মানুষদের কৃতিত্ব বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই আমরা। আপনার নজরে এই খবর থাকলে জানান এই নম্বরে- ৭৯০৮০০২২৪৮
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের সেরা মাধ্যম ‘হাইলাইস বেঙ্গল’। বিজ্ঞাপনের জন্য ফোনে করুন- ৯৯৩৩১০৬৯০৪, ৭৯০৮০০২২৪৮