জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান-: আসানসোল শিল্পাঞ্চলের গৌরব হলো ইস্কো অর্থাৎ ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেড। শুধু স্থানীয়দের নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বহু মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে এই সংস্থাটি। কালের নিয়মে যন্ত্রপাতিগুলি একসময় দুর্বল হয়ে পড়ে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারখানাটি আধুনিকীকরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কারখানা সম্প্রসারণ ও নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজন জমি। ততদিনে এসে গেছে আধুনিক প্রযুক্তি। কারখানার ভিতরে থাকা পাঁচটি বিশাল আকৃতির কুলিং টাওয়ারের আর প্রয়োজন হচ্ছিলনা। ফলে কর্তৃপক্ষ সেগুলি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
৬ এপ্রিল, ঘড়ির কাঁটা সবেমাত্র ১২ টার ঘর অতিক্রম করেছে। পেশার তাগিদে ক্যামেরা নিয়ে ছোটাছুটি করছেন স্থানীয় সাংবাদিক কুল। নিরাপদ দূরত্বে অপেক্ষা করছে উৎসুক জনতা। অবশেষে এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সবার চোখের সামনে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে ধূলিসাৎ হয়ে গেল ইস্কো স্টিল কারখানার পাঁচটি কুলিং টাওয়ার। আধুনিকতার কাছে বশ্যতা স্বীকার করল ঐতিহ্য। একইসঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য খুলে দিল নতুন সম্ভাবনা। জানা যাচ্ছে এরফলে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের কোনও ক্ষতি হয়নি।
এই টাওয়ার ভাঙার কাজটা প্রায় ৬ মাস আগে শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও মুম্বাই থেকে আগত দুটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা। সবকিছু ঠিকঠাক রেখে এবং এলাকার যাতে কোনোরকম ক্ষতি নাহয় তার জন্য যথেষ্ট সন্তর্পণে তারা গত ছয় মাস ধরে বিস্ফোরক স্থাপনের কাজ করে গেছে।
কারখানার জনসংযোগকারী আধিকারিক ভাস্কর কুমার বললেন, ইস্পাত তৈরি করার সময় ব্যবহৃত জল ঠান্ডা করার জন্য এই টাওয়ারগুলি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির জন্য এই টাওয়ারগুলোর প্রয়োজন হবেনা। সেই জায়গায় এখন নতুন কারখানা স্থাপন করা হবে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। স্থানীয় বাসিন্দা মুনমুন মুখার্জ্জী বললেন, এই কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা কাজ করেছেন। ফলে কারখানার সঙ্গে আমাদের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। তবে আধুনিকীকরণের ফলে বর্তমান প্রজন্ম কাজের সুযোগ পাবে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।