দাবার চালে বাজিমাত করছে দশম শ্রেণীর ছাত্রী। ঝুলিতে সোনা সহ আটটি আন্তর্জাতিক পদক। বিশ্ব খেতাবের হাতছানি সামনে। লক্ষ্য গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার । ‘উমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার’ খেতাবজয়ী দাবাড়ুর এখন বাধা আর্থিক প্রতিকূলতা। বিদেশ যাওয়ার সুযোগ এবারও হয়তো হাতছাড়া হবে।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দশম শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টি মুখার্জী। অনূর্ধ্ব সাত এশিয়ান স্কুল চেঞ্জ কম্পিটিশনে ব্রোঞ্চ জয় দিয়ে শুরু। এরপর একের পর এক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নজরকাড়া পারফরম্যান্স। সদ্য শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব সতেরো গার্লস ন্যাশনাল স্কুল চেজ চ্যাম্পিয়নশিপে বৃষ্টি চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়াও ন্যাশনাল ইয়ুথ অনূর্ধ্ব ১৮ গার্লস এ দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে গত জুন মাসে।
কমনওয়েলথে একটি সোনা, একটি রুপো জয়ী। এশিয়ান স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে একটি সোনা একটি রূপো। ২০১৮ থাইল্যান্ডে ইন্ডিয়া টিমের লিড দিয়ে চ্যাম্পিয়ন। সেখানেই একক প্রতিযোগিতায় সিলভার পায়। বৃষ্টির সাফল্য বলে শেষ করা যাবেনা। ২০১৯ এ শ্রীলঙ্কাতে এশিয়ান যুব দাবা প্রতিযোগিতায় ইন্ডিয়া টিমকে লিড দিয়ে সোনা এনে দিয়েছিল। এভাবেই বৃষ্টির ঘরভর্তি শুধুই সার্টিফিকেট আর মেডেল, পুরস্কার। শুধু কি তাই, ইতিমধ্যেই “উমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার” খেতাব জয় করে নিয়েছে।
থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগে টাকার অভাবে তাকে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছেড়ে যেতে হয়েছিল।
সামনে আগস্ট এ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আরব কান্ট্রিতে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বৃষ্টি। নিজেকে প্রতিনিয়ত তৈরি করছে। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার বিপুল খরচ পাবে কোথা থেকে? বাবা মুদির দোকান চালিয়ে দুই মেয়েকে বড় করেছে। বড় মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। আর ছোট মেয়েকে দাবা শিক্ষার জন্য কোন ত্রুটি রাখেনি। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ড যাওয়ার জন্য মা গহনা বন্ধক রেখেছিল।
বৃষ্টির ইচ্ছা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার। ইচ্ছা ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা। আদৌ কি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে?
ছোট বয়সেই বাবা-মা বুঝতে পারে বৃষ্টির প্রতিভা। মেমারি থেকে ট্রেন বাস জার্নি করে গোর্কি সদনের আলেখাইন দাবা ক্লাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
বাবা দেবাশীষ মুখার্জী মুদির দোকান চালান। তাও টানা লকডাউনে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। নিজেদের বাড়ির কিছুটা অংশ ভাড়াও দিয়েছেন সংসার চালাতে।
চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে বৃষ্টি । বাবা-মা পাশে থেকে সাধ্যমত চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু সেটা কতদিন। সরকারি বা বেসরকারি কোন সাহায্য না পেলে বৃষ্টির মতো উজ্জ্বল প্রতিভাবান এক খেলোয়ারের পতন ঘটায় স্বাভাবিক।
এই অবস্থায় বৃষ্টির স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। বৃষ্টির ইচ্ছা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার। ইচ্ছা ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা। আদৌ কি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে