দেখুন মা বোঁয়াইচন্ডীর কাহিনীর ভিডিও নিউজ।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও এই দেবীর ছবি প্রকাশ্যে আসেননি। দেবীকে চাক্ষুষ দেখতে হয় মন্দিরে গিয়ে। কালীপূজায় বিশেষ অতিথি মেনে দেবী কে পুজো করা হয়। সেই সময় ছাগ বলি হয়।
মা বসন্ত চন্ডী। যে দেবী গ্রামের নাম অনুসারে বোঁয়াই চন্ডী নামে পরিচিত। পুর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষের বোঁয়াই চন্ডী গ্রামে এই এই দেবীর অবস্থান। গ্রামে রয়েছে বিরাট মন্দির। তবে দেবীকে সাক্ষাৎ দর্শন করা যায় ঠিকই দেবীর কোন ছবি প্রকাশ্যে আজ পর্যন্ত আসেনি। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ও দেবীর দর্শন শুধুমাত্র ওই মন্দিরে গিয়েই এই করতে হয়। কয়েকজন ছবি তোলার চেষ্টা করলে তাদের ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে। তাই ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ রয়েছে। এজন্যই আজও কেউ দেবীর ছবি তোলার সাহস পাননি।
আষাঢ় মাসের ৬,৭,৮,৯,১০ তারিখ অম্বুবাচীতে মূল পূজা হয়। বসে মেলা। শুধুমাত্রই জেলা নয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষজনের ভিড় হয় ।
মহামারী, বসন্ত, কলেরার রক্ষাকারী হিসাবে দেবীর খ্যাতি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের বিশ্বাস, বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি দেবীর কৃপাই মুক্তি লাভ হয়। মন্দিরের পাশেই পুকুরে স্নান করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এমন বিশ্বাসও রয়েছে।
কথিত আছে, এক সময় গ্রামে বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই সময় এক ব্রাম্ভ্রন পরিবারের কোন এক ব্যক্তিকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন বোঁয়াইচন্ডীর পুজো করতে । পাশের গ্রামের ‘কুলে রাইখা দিঘী’ থেকে দেবীকে পাওয়া গিয়েছিল।
বর্তমানে যে মন্দির রয়েছে সেখানে এক সময় ছিল মহাশ্মশান। কষ্টি পাথরের ছ ফুট উচ্চতার দেবী অষ্টভূজা। প্রায় ৬০০ বছর ধরে দেবীর পুজো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভক্তরা বলেন দেবীর কাছে মনস্কামনা করলে তিনি পূরণ করেন এবং নিরোগ ও সুস্থ রাখেন। সেই বিশ্বাসে ভর করি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ জন আসেন মন্দিরে।
প্রতিদিন নিত্য সেবা হয়। আষাঢ় মাসে বিশেষ পূজা ছাড়াও দুর্গাপুজো, কালীপুজো সহ অন্যান্য বিশেষ তিথি গুলিতে নিয়ম মেনেই পূজা-অর্চনা হয়। দেবীকে প্রতিদিনই ভোগ নিবেদন করা হয়। রান্না করা খাবার সহ পায়েস ভোগ দেওয়া হয়। ভোগে মাছ দেওয়া হয়। যাগ-যজ্ঞ বলি সবই চালু আছে।
মন্দিরের সেবাইত তাপস কুমার মুখার্জী ও গনেশ চন্দ্র রায় জানালেন, এই গ্রামে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এসেছিলেন। মন্দিরের পাশে যে পুকুর রয়েছে সেই পুকুরের জল চাষ জমিতে দিলে ফসল ভালো হয়। যেখানে মাছ চাষ হয় সেই পুকুরে দিলে মাছ চাষ ভালো হয়। এমনকি এই জল রোগব্যাধি দূর করে এই বিশ্বাস রয়েছে। প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার ছাগ বলি হয়। তবে নবমী এবং অম্বুবাচী তিথিতে অসংখ্য বলি হয়।
দেবীর মন্দিরকে ঘিরে একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অসংখ্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেবীর পুজো অর্চনার উপকরণ বিক্রির জন্য। ভক্তরা এখান থেকেই পুজোর উপকরণ নিয়ে দেবীকে পূজা দেন।
প্রায় ৮০ জন পুরোহিত এই মন্দিরে সেবাইত হিসাবে যুক্ত রয়েছেন। তবে এক একটি এলাকার ভক্তদের জন্য একজন পুরোহিতের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা আছে।
সারা বছরই এই এলাকায় উৎসবের চেহারা নেয়। তবে বিশেষ তিথি গুলিতে বিশেষ করে আষাঢ় মাসে দূর-দূরান্তের অসংখ্য ভক্ত সমাগমে মহা উৎসবের চেহারা নেয় গোটা এলাকা।